ধানের খোল পোড়া ও খোল পঁচা রোগের মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী?

উত্তর সমূহ

  1. মোঃ মাশরেফুল আলম, উপজেলা কৃষি অফিসার, জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ

    খোল পচা রোগ (Sheath rot) রোগের কারণ স্যারোক্লেডিয়াম ওরাইজি (Sarocladium oryzae) নামক ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে। রোগের বিস্তার : এটা বীজবাহিত। রোগাক্রান্ত নাড়া ও বিকল্প পোষকে অবস্থান করে। মাজরা পোকা ও টুংরো রোগ আক্রান্ত গাছে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। গরম ও সেঁতসেঁতে আবহাওয়ায় এ রোগ বৃদ্ধি পায়। বৃষ্টির ঝাপটায় এ রোগ ছড়ায়। খোলপচা রোগটি সব মৌসুমেই দেখা যায়। সাধারণত গাছের থোর অবস্থা এ রোগটির উপযোগী সময়।রোগের লক্ষণরোগটি কোনো অবস্থাতেই পাতায় হয় না। খোলপচা রোগটি যে কোনো খোলে হতে পারে তবে শুধুমাত্র ডিগ পাতার খোল আক্রান্ত হলেই ক্ষতি হয়ে থাকে। ধানে থোড় আসার সময় এ রোগের আক্রমণ দেখা যায়। প্রথমে শেষ পাতার খোলের ওপর গোলাকার বা অনিয়মিত লম্বা দাগ হয়। দাগের কেন্দ্র ধূসর ও কিনারা বাদামি রঙ বা ধূসর বাদামি হয়। দাগগুলো একত্রে বড় হয়ে সম্পূর্ণ খোলেই ছড়াতে পারে। থোড়ের মুখ বা শীষ পচে যায় এবং গুঁড়া ছত্রাংশ খোলের ভেতর প্রচুর দেখা যায়। রোগের আক্রমণ বেশি হলে অনেক সময় শীষ আংশিক বের হয় বা মোটেই বের হতে পারে না এবং ধান কালো ও চিটে হয়ে যায়।রোগের প্রতিকারসুস্থ বীজ ব্যবহার করতে হবে। কার্বেন্ডাজিম (অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন + থিরাম (প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি) প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।  জমির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। সুষম সার ব্যবহার ও ইউরিয়া সার কম প্রয়োগ করতে হবে। পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। খোল পচা দেখা দিলে জমির পানি শুকিয়ে কিছুদিন পর আবার সেচের পানি দিতে হবে। প্রোপিকোনাজোল (টিল্ট ২৫০ ইসি) ১ লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। খোলপোড়া রোগ (Sheath blight) রোগের কারণ : রাইজোকটোনিয়া সোলানি (Rhizoctonia solani) নামক ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে।রোগের বিস্তারআউশ ও আমন মৌসুমে এ রোগটি বেশি হয়। মাটি ও পরিত্যক্ত খড়কুটায় ছত্রাক থাকে। বেশি তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় এ রোগের প্রকোপ বেশি হয়। অতিরিক্ত পরিমাণে ইউরিয়া সারের ব্যবহার করলে এবং ঘন ঘন বৃষ্টিপাত ও জমিতে পানি জমে থাকলে ও এ রোগের আক্রমণ বাড়ে।রোগের লক্ষণ : পানির স্তর বরাবর খোলের ওপর পানি ভেজা সবুজ রঙের দাগ পড়ে। দাগগুলোর কেন্দ্র ধূসর এবং প্রান্তে বাদামি রঙ ধারণ করে। দাগগুলো একত্র হয়ে পাতার খোল ও পাতায় ছড়িয়ে পড়ে যা দেখতে গোখরা সাপের মতো মনে হয়। আক্রমণ বেশি হলে ক্ষেতের মাঝে মাঝে আগুনে পুড়ে যাওয়ার মতো দেখায়।রোগের প্রতিকার : রোগ সহনশীল জাত ব্যবহার করতে হবে। সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ (২০-২৫ সেমি দূরে) ও আক্রান্ত জমির খড়কুটা জমিতে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। সুষম সারের ব্যবহার এবং অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার পরিহার করা।  রোগ দেখা দেয়ার পর বিঘাপ্রতি ৫ কেজি পটাশ সার উপরি প্রয়োগ এবং প্রোপিকোনাজোল (টিল্ট ২৫০ ইসি) বা টেবুকোনাজল(ফলিকুর২৫০ ইসি) বা হেক্সাকোনাজল (কনটাফ৫ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।

  2. সাবাব ফারহান, উপজেলা কৃষি অফিসার, রুমা, বান্দরবান

    ধন্যবাদ